Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

কিশোরগঞ্জের ভাষা ও সংস্কৃতি

সংস্কৃতিঃ কিশোরগঞ্জ  ‘মৈমনসিংহ  গীতিকার’  এক  বিশাল ভান্ডার।  মৈমনসিংহ  গীতিকার  পালাসমূহের  মধ্যে বিশেষ  করে  ‘মহুয়া’,  ‘মলুয়া’,  ‘চন্দ্রাবতী’  ও  ‘দস্যু কেনারাম’ এ  বর্ণিত  গ্রাম-হাওর-বিল  কিশোরগঞ্জ জেলার  প্রতিচ্ছবি।  ভাটিয়ালী   এ  জেলার  একটি বিখ্যাত  গান।  এখনো  এ  এলাকার  মাঝি-মাল্লার কন্ঠে  এ  গান  বেজে  উঠে।  এ   জেলার  মেয়েলী গীত,  লোক  কিস্সা,  লোককাহিনী,  লোকবিশ্বাস, পালাগান, প্রবাদ-প্রবচন, ধাঁধা, শ্লোক, ছড়া ইত্যাদি বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। মসজিদ, মন্দিরে শিরনি-ভোগ দেওয়া, বিভিন্ন বস্তুকে দুগ্ধ¯œান, বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে, খড়ের ভোলা পুড়িয়ে মশা-মাছির মুখ পোড়ানো, কলেরা বসন্ত রোগে ঝাঁড় ফুঁক দেওয়া, গৃহপালিত পশুর শনিরদশা, ফসল রক্ষার জন্য হিরালীর মন্ত্র পাঠ ইত্যাদি লোকসংস্কার এ  জেলায়  প্রচলিত  রয়েছে।  এ  জেলার  নিকলী  ও বাজিতপুরের নৌকাবাইচের ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। এছাড়া  কাবাডি,  গোল্লাছুট, কাবাডি,  ঘোড়দৌড়, কানামাছি, লাঠিখেলা, কুস্তি, ডাংগুটি, গরুদৌড়,  ষোলঘুটি,  বাঘবন্দি,  জোড়-বিজোড়, বনভোজন, তোফাভাতি ইত্যাদি এ অঞ্চলে এখনও প্রচলিত।  বিভিন্ন  নাট্যগোষ্ঠীর  নাট্যচর্চাও  এখানে পরিলক্ষিত হয়।


ভাষাঃ প্রমিত ভাষা রীতির বাইরে অঞ্চলভেদে প্রত্যেক দেশেই একটি নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার এমন অনেক উপজেলা আছে যেগুলোতে আঞ্চলিক ভাষার ক্ষেত্রে অনেক বৈপরিত্য লÿ্য করা যায়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জের নিজস্ব ভাষা রীতি এ অঞ্চলের মানুষকে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছে।  এ জেলার ভাষা রীতির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে কথা বলতে গিয়ে অনেক সময় মানুষেরা অতীতকালের শব্দ বর্তমান কালের বাক্যে ব্যবহার করে থাকে। যেমন-খাইতামনা, যাইতামনা, ধরতামনা, করতামনা ইত্যাদি। এসকল শব্দ শুদ্ধ ভাষায় সাধারনতঃ অতীতকালে ঘটিত অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন-(সাধু ভাষায়) ‘আমি বাড়ীতে খাইতামনা’ (চলিত ভাষায়) ‘আমি তার বাড়ীতে খেতামনা’। কিন্তু কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে এই সকল শব্দ বর্তমানকালে ঘটমান অর্থে কথ্য ভাষায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন-আমি খাইতামনা (আমি খাবোনা), আমি যাইতামনা (আমি যাবোনা)। কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি জেলার দূরবর্তী হাওররর উপজেলা অষ্টগ্রামের স্থানীয় অধিবাসীদের একটি নিজস্ব ভাষা আছে, যা একমাত্র স্থানীয় অধিবাসী ব্যতীত অন্যের পক্ষে বুঝে উঠা কঠিন। এ ভাষার স্থানীয় নাম ‘ছহুম ভাষা’। ছহুম ভাষার কিছু উদাহরণ নিম্নরুপ-টাইঙ্গা-সিগারেট বা বিড়িঃ ‘সাইর‌যারে টাইঙ্গা বেড়অ’ অর্থাৎ আমাকে একটা সিগারেট বা বিড়ি দাও। এছাড়াও জেলার অনেক কাপড়ের দোকান ও জুতোর দোকানগুলোতে মালিক-কর্মচারীরা একটি দুর্বোধ্য সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে থাকে। মূলতঃ ব্যবসায়িক গোপনীয়তা রক্ষার তাগিদ থেকেই এ ভাষার উদ্ভব। কবে এবং কিভাবে এ সাংকেতিক ভাষার সৃষ্টি তার কোন সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও সুদীর্ঘকাল ধরে পুরুষানুক্রমিকভাবে দোকানগুলোতে এ ভাষার প্রচলন বলে জানা যায়।