"হাওর-বাঁওড় মাছে ভরা, কিশোরগঞ্জের পনির সেরা"
পনিরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ পনির হলো ছানা থেকে তৈরি একটি দুগ্ধজাত খাদ্য। সাধারণত দুধে লেবুর রস, ভিনেগার অথবা অ¤øজাতীয় কোন পদার্থ যোগ করে ছানা তৈরি করা হয় এবং সেই ছানা থেকে পানি বের করে দিয়ে পনির প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। অষ্টগ্রামের উৎপাদিত সুস্বাদু পনির সারাদেশে সমাদৃত। বর্তমানে অষ্টগ্রামে উৎপাদিত পনির বঙ্গভবন থেকে গণভবন তথা সারাদেশে সমাদৃত। একসময় এর সুখ্যাতি সুদূর ইংল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ধারণা করা হয় ৩০০-৩৫০ বছর আগে থেকে অষ্টগ্রামে পনির উৎপাদন শুরু হয়। এই জনপদে সাধারণ মানুষের হাতে তৈরি উৎকৃষ্ট পনির উৎপাদন কিভাবে শুরু হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। সম্ভবত পাঠান, মুঘল কিংবা দত্ত বংশীয় অভিজাত মানুষের আগমনের সঙ্গে পনিরের উৎপাদন প্রণালীও এদেশে আসে। ধারণা করা হয় যে, পনিরের জনপ্রিয়তাও তাদেরকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয়েছে এবং ছড়িয়ে পড়েছে। জনশ্রæতি আছে যে, অষ্টগ্রামের উৎপাদিত পনির মুঘল রাজাদের কাছে খুবই সমাদৃত ছিল। পনির কিশোরগঞ্জ জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য। দেশে-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করা অষ্টগ্রামের পনির এখন হয়ে উঠেছে গোটা কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের অন্যতম স্মারক।
পনির তৈরির সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়াঃ স্থানীয় কারিগর ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পনির তৈরি খুব কঠিন কাজ নয়। একটি বড় মাটির গামলায় কাঁচা দুধ সংরক্ষণ করে তাতে ‘মেওয়া’ নামক একটি পদার্থ মেশালেই দুধ ছানা হয়ে যায়। সেই ছানা বাঁশের তৈরি বাটি আকৃতির পাত্রে লবণ মিশিয়ে জমাট করে রাখতে হয়। শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ছানাটি পনিরে পরিণত হয়। এরপরই সেটি বাজারজাত করা হয়।
পনিরের ব্যবহারিক দিকঃ ঢাকার মাহুতটুলিতে অবস্থিত পনিরের অন্যতম আড়তদার হলো ডানা এন্টারপ্রাইজ; এই প্রতিষ্ঠান থেকে অন্যান্য পাইকারদের মাধ্যমে সারা ঢাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে ঢাকাই পনির নামে খ্যাত অষ্টগ্রামের পনির। বর্তমানে ঢাকায় পনিরের পাইকারি আড়ত আছে আটটি। অষ্টগ্রাম ছাড়াও ফরিদপুর, রাজশাহী, শরীয়তপুরসহ দেশের আরও কিছু জেলায় তৈরি হয় এই মুখরোচক পনির। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকরখানির মধ্যে অন্যতম হলো পনির দেয়া বাকরখানি যা বেশ আগে থেকে ঢাকার বাসিন্দাদের মাঝে জনপ্রিয়। এছাড়া এলাকাভিত্তিক বেকারি ও হোটেলগুলোতেও পনিরের নানা ব্যবহার রয়েছে। অতিথি আপ্যায়নে পনিরের ব্যবহার চলে আসছে বহু আগে থেকেই। অনেকেই বার্গার, শিঙ্গাড়া, সমুচা, নানরুটি ইত্যাদি তৈরিতে পনির ব্যবহার করে থাকেন। একসময় অনেকেই অসুস্থতা-পরবর্তী সময়ে খাবারের রুচি বাড়াতে পনির খেতেন। পনিরের চা অনেক স্থানেই পাওয়া যায়। উচ্চমানের প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ পনির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে যদিও উচ্চ রক্তচাপের কারণে অনেকেই একে এড়িয়ে যান প্রিয় খাবার হওয়া সত্তে¡ও। ঐতিহ্যবাহী ঢাকায় এখনো পনিরওয়ালাকে দেখা যায় লাল কাপড়ের ওপর গোল পনিরগুলোকে সাজিয়ে রাস্তার ধারে বসে থাকতে। অনেক স্থানে ফেরি করেও বিক্রি হয় এই পনির। পুরান ঢাকার রাস্তায় এই চেনা দৃশ্য দেখে অনেকেই একটু থেমে স্বাদ নেন প্রিয় পনিরের।
পনিরের উপকারভোগীঃ পনিরের উপকারভোগীদের মধ্যে রয়েছে ভোক্তা যারা উৎপাদিত পনির পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ক্রয় করেন। পনির উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিক যারা উৎপাদিত পনির বিক্রয়ের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে এবং খামার বা পনির উৎপাদনে বিনিয়োগকারী যাদের তত্ত¡াবধানে খামার বা কারখানা পরিচালিত হয় তারাও পনিরের উপকারভোগী। উৎপাদিত পনির স্থানীয় বাজারসহ চাহিদা রয়েছে দেশের এমন অন্যান্য স্থানে বা বিদেশে রপ্তানি করে অর্থ উপার্জন করে উদ্যোক্তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হন এবং কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকদের অর্থ উপার্জনে সহায়তা করেন। পনির উৎপাদনের সাথে অষ্টগ্রাম উপজেলার ৫০/৬০টি পরিবার জড়িত। বর্তমানে জেলায় পনিরের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৪০ টন যার আনুমানিক মূল্য প্রায় বিশ কোটি টাকা।
পনিরকে ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে নির্বাচনের যৌক্তিকতাঃ
পনির ব্যবসাকে পনির শিল্পে রূপান্তর;
পনির শিল্পের মাধ্যমে দুগ্ধ খামারীদের উৎসাহ প্রদান এবং দুগ্ধ খামার শিল্পকে বৃহৎ শিল্পে পরিণত করা;
পনিরের ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে কিশোরগঞ্জকে দেশে এবং দেশের বাইরে তুলে ধরা;
পনিরের ঐতিহ্য রক্ষা করে পূর্বের খ্যাতি ও যশ ফিরিয়ে আনা;
বৈশি^ক চাহিদা অনুযায়ী পনিরের উৎপাদন বৃদ্ধি করা;
সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে পনিরের স্বীকৃতি অর্জন;
পনির উৎপাদনের মাধ্যমে এ জেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
পনিরকে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে নিম্নোক্ত ফলাফলসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে সার্বিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও
কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে:
পনিরের বাৎসরিক উৎপাদনঃ বর্তমানে ৪০ টন থেকে আগামী তিন বছরে ৬০ টনে উন্নীতকরণ;
পনিরের বাৎসরিক বিক্রয়ঃ ২ গুণ বৃদ্ধিকরণ;
নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিঃ ৩০০০ জন;
আর্থিক মূল্যে বিক্রয় বৃদ্ধিঃ ৩৫,০০,০০০.০০ টাকা।
আগামী ত্রৈবার্ষিক কর্মপরিকল্পনাঃ
পনিরের বার্ষিক উৎপাদন বর্তমানে ৪০ টন থকেে আগামী তিন বছরে ৬০ টনে উন্নীতকরণ।
পনির শিল্পের বিকাশে ব্র্যান্ডবুকের হালনাগাদ সংস্করণ প্রণয়ন।
জেলা-ব্র্যান্ডিং এ দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রশক্ষিণ আয়োজন।
পনির শিল্পকে পর্যটকদের মাঝে প্রচার, প্রসার, আর্কষণীয় এবং সহজলভ্য করার জন্য অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, ইটনা, নকিলী, করমিগঞ্জ উপজলার নৌপথের যথোপযুক্ত স্থানে ভাসমান বিপণন কেন্দ্র স্থাপন।
গরু ও মহিষ পালনরে জন্য বিশেষ এলাকা প্রতিষ্ঠা করা।
দুধ হতে পনির উৎপাদনের জন্য অষ্টগ্রাম, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, নকিলী, ইটনা ও মিঠামইন উপজলোয় পনির প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র স্থাপন ও উন্নতমানের পাস্তুরাইজশেন যন্ত্র সরবরাহ।
পনির বিপনন ও সংরক্ষণরে জন্য অষ্টগ্রামে একটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণাগার স্থাপন।
তিন বছরে পনির শিল্পে ৩০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
পনির উৎপাদনে বিদ্যমান সমস্যাঃ দেশের অন্যান্য জেলায় এ পণ্য বিক্রয়ের জন্য কোন অনুমোদিত বিক্রয় কেন্দ নেই। তবে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলা হতে পণ্য ক্রয় করে ব্যবসায়ীরা রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্থানে এ পণ্যটি বিক্রয় করে থাকেন। পনির উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রশিক্ষণের জন্য কোন নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নেই। তবে মহিলা সংস্থা/যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর/মহিলা সমিতি মাঝে মাঝে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS